ঋকবেদ সংহিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হল। ঋকবেদ সংহিতা পিডিএফ (pdf) বাংলা বেদ আলোচনা ।
Table of Contents
ঋকবেদ সংহিতা
চারটি সংহিতার মধ্যে ঋকবেদ সবচেয়ে প্রাচীন। ইন্দো-ইউরোপীয় জাতি ও ভাষার প্রাচীনতম সাহিত্য হিসাবে সকলেই ঋকবেদকে স্বীকার করেন।
ম্যাকডোনালের মতে,
“The Rigveda is undoubtedly the European languages”.
অর্থাৎ, ” ইন্দো – ইউরোপীয় ভাষা সমূহের মধ্যে সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন হল ঋগ্বেদ।”
ঋকবেদের বহু মন্ত্র অন্যান্য সংহিতায় দেখা যায়। ঋকবেদ সংহিতা হল কতগুলি সূক্তের বা প্রশস্তির সমষ্টি।
সূক্ত শব্দের অর্থ
সূক্ত শব্দের অর্থ হল সমষ্টি। কতগুলি ঋক্ বা মন্ত্রের সমষ্টি হল সূক্ত।
ঋকবেদ সংহিতার ভাগ
ঋকবেদ সংহিতায় দুটি ভাগ রয়েছে-
i) মণ্ডল, অনুবাক, সূক্ত এবং ঋক্।
ii) অষ্টক, অধ্যায়,বর্গ,মন্ত্র।
প্রথমটি অনুষ্ঠানের জন্য এবং দ্বিতীয়টি অধ্যায়নের জন্য উপযোগী।
ঋকবেদ সংহিতার মন্ডল বিন্যাস
সমগ্র ঋকবেদ সংহিতা দশটি মন্ডলে বিভক্ত। দশটি মন্ডল আবার প্রতিটি ৮৫টি অনুবাকে বিভক্ত। ৮৫টি অনুবাক আবার ১০২৮টি সূক্তে বিভক্ত। ঋকবেদের মন্ত্র সংখ্যা হল ১০,৫৫২টি।
ঋকবেদ সংহিতার মন্ডলগুলির বিন্যাস
ঋকবেদ সংহিতার মন্ডল গুলির বিন্যাস লক্ষ্য করলে কয়েকটি বিষয় নজরে পড়ে।
ঋকবেদ সংহিতার প্রথম মন্ডল ও দশম মন্ডল
সংহিতার প্রথম মন্ডল ও দশম মন্ডলে বিভিন্ন বংশের ঋষিদের মন্ত্র সংগৃহীত হয়েছে, এবং উভয় মন্ডলের মন্ত্র সংখ্যা সমান(১৯১)। প্রথম ও দশম মন্ডলটি প্রকীর্ণ মন্ডল নামে পরিচিত।পরবর্তীকালে সংযোজনা হল প্রকীর্ণ মন্ডল। দশম মন্ডলের কয়েকটি সূক্তে দার্শনিক চিন্তা ধারায় পরিচয় পাওয়া যায়। প্রথম ও দশম মন্ডলের শুরুতেও অগ্নিসূক্ত আছে।
ঋকবেদ সংহিতার দ্বিতীয় থেকে সপ্তম মন্ডল
দ্বিতীয় থেকে সপ্তম মন্ডল পর্যন্ত এই ছটি মন্ডলকে আর্ষমন্ডল বলে। এক মন্ডলে এক একজন ঋষির বংশের মন্ত্র আছে। এরা হলেন- গৃৎসমদ, বিশ্বামিত্র, বামদেব , অত্রি, ভরতদ্বাজ ও বসিষ্ট। আর্ষমন্ডলগুলি ঋক সংহিতার প্রাচীনতম অংশ। আর্ষ মন্ডলের প্রতিটি মন্ডল অগ্নিসূক্ত দিয়ে শুরু। আর্ষমন্ডলের প্রথমে অগ্নিসূক্ত, তারপর ইন্দ্রসূক্ত, তারপর অন্যান্য সূক্তের আলোচনা রয়েছে।
ঋকবেদ সংহিতার অষ্টম মন্ডল
অষ্টম মন্ডলটি প্রগাথ নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঋষি প্রগাথের সংগ্রহ বলে এইরূপ নাম হয়েছে।
প্রগাথ মন্ডলের সূক্তগুলি কান্ন ঋষিদের রচনা দশম মন্ডলে রয়েছে বিখ্যাত পুরুষসূক্ত। এখানেই সর্বপ্রথম ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র। এই চার প্রকার বর্ণের উল্লেখ রয়েছে। বিভিন্ন দেবদেবীর উদ্দেশ্যে রচিত ঋকবেদের মন্ত্রগুলি অপূর্ব কাব্যের রূপ ধারণ করেছে।
ঋকবেদ সংহিতার নবম মন্ডল
নবম মন্ডলটি সোম মন্ডল নামে পরিচিত। এতে সোম সম্পর্কীয় মন্ত্রের সংগ্রহ রয়েছে। এটি পবমান মন্ডল নামে পরিচিত।প্রগাথ ও সোম মন্ডল হল পরিশিষ্ট।
নবম মন্ডলের সূক্তগুলিতে সোমদেবতার স্তুতি রয়েছে, সাথে সাথে সোমরস পানের প্রশংসা করা হয়েছে। সোম একটি উদ্ভিদ। এর থেকে মাদক রস বের করা হতো। এই রস পানে দেবতারা তুষ্ট হতেন। এই সোম রস পানের কথা ইন্দো-ইউরোপীয় যুগ থেকে চলে এসেছে। সেই জন্য নবম মন্ডলকে সুপ্রাচীন বলে ধরতে পারি। সোম মন্ডলের আরেক নাম উদগাতৃ। কারণ সোমযোগে উদগাতার কাছে যেসব মন্ত্র দরকার এটি হচ্ছে তার সংগ্রহ। দেবতার আবাহন ও প্রশস্তি, তার উদ্দেশ্যে গান এবং তাকে সোমরস পান করতে দেওয়া হল যজ্ঞের রীতি।
ঋকবেদ সংহিতার অপর শাখা
ঋকবেদ সংহিতার আবার দুটি শাখা আছে- i) শাকল এবং ii) বাষ্কল।
ঋকবেদ সংহিতা পাঠ
ঋকসংহিতা সম্পাদনার মূলে একটা সুষ্ট পরিকল্পনা রয়েছে। প্রথম থেকে দশম মন্ডলের প্রথম ভাগ পর্যন্ত ভাবের একটা সংহতি রয়েছে। দশম মন্ডলের দ্বিতীয় ভাগ হল সংহিতার প্রকৃত উপসংহার ও সংযোজন। ঋকবেদ হোতৃগনের বেদ হলেও চারটি ঋত্বিকের সাথে যুক্ত। সংহিতার রূপটি অভুক্ত রাখার জন্য নানারকম পাঠের প্রবর্তন করা হয়েছে। ফলে হাজার হাজার বছর ধরে ঋকসংহিতার চেহারা এতটুকুও পরিবর্তিত হয়নি। পাঠগুলির মধ্যে মূল হল সংহিতা পাঠ। সংহিতা অর্থাৎ সন্ধি ভেঙে পদগুলি বিশ্লেষণ করে যে পাঠ তৈরি করা হয় তাকে বলে পদপাঠ।
এই পাঠের প্রথম প্রবর্তক হলেন শাকল্য মুনি। সংহিতা পাঠ ও পদপাঠ মিলিয়ে হয় ক্রমপাঠ। ক্রমপাঠ থেকে আরও আটটি পাঠের সৃষ্টি হয়েছে। যেমন-
i) জটা, ii) মালা, iii) শিখা, iv) রেখা, v) য্বজ, vi) দন্ড, vii) রথ, viii) ঘন।